আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
১৯৭৯ সালের ২০ নভেম্বর কাবা শরীফে ঘটে যায় এক ভয়াবহ ও অবিস্মরণীয় ঘটনা, যা ইসলামী ইতিহাসে এক কালো অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছে। সারা বিশ্ব থেকে ফজর নামাজের জন্য প্রায় ৫০ হাজার মুসলমান কাবায় জড়ো ছিলেন। তাদের মধ্যে মিশে ছিলেন ৪০ বছর বয়সী জুহায়মান আল ওতাইবি এবং তার প্রায় ২০০ অনুসারী, যারা এক পরিকল্পিত হামলার মাধ্যমে কাবার নিয়ন্ত্রণ দখল করে নেয়।
নামাজ শেষে ইমাম যখন মাইক্রোফোন থেকে নামাজ শেষের ঘোষণা দিচ্ছিলেন, তখনই জুহায়মান ও তার লোকেরা মাইক্রোফোন দখল করে নেন এবং আগে থেকে কাবায় আনা কফিন থেকে অস্ত্র বের করে নিজেদের মধ্যে দ্রুত বিতরণ করেন। তারা নিজেদেরকে ‘ইমাম মাহদী’র অনুসারী দাবি করে, একটি লিখিত ভাষণে ঘোষণা দেন যে, “মহান ইমাম মাহদী বিশ্বে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন”। তবে এই ইমাম মাহদী ভুয়া এবং জুহায়মানের দলের নেতৃত্বে ছিলেন মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল কাহতানি, যিনি আসলে তরুণ ধর্ম প্রচারক ছিলেন।
জুহায়মান তার অনুসারীদের কাবার গেইট ও উঁচু মিনারগুলোতে অবস্থান নিতে নির্দেশ দেন, পাশাপাশি যে কেউ বাধা দিলে গুলি করার হুমকি দেন। প্রথমদিকে ভাষণ আরবিতে হওয়ায় বিদেশি হাজিরা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়, যখন কাবায় গুলির শব্দ শোনা যায় এবং সবাই আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াতে শুরু করে।
জুহায়মান ও তার অনুসারীরা আল জামা আল সালাফিয়া আল মুহতাসিবা (জেএসএম) নামে একটি উগ্রপন্থী সংগঠনের সদস্য ছিলেন। এই সংগঠনের লক্ষ্য ছিল সৌদি সমাজ থেকে আধুনিকতা ও ভোগবাদী সংস্কৃতি বিলোপ করা। তেলের দৌলতে ক্রমশ ভোগবাদীতে ডুবে যাওয়া সৌদি সমাজের বিরুদ্ধে তাদের বিদ্রোহ শুরু হয়।

জুহায়মান আল ওতাইবি
জুহায়মানের অতীত বেশ বিতর্কিত ছিলো। তিনি ন্যাশনাল গার্ডের সৈনিক ছিলেন এবং মাদক, চোরাচালানিসহ অবৈধ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিলো। তবুও তার ক্যারিশমায় অনেক অনুসারী তার প্রতি আকৃষ্ট হন।
সৌদি নেতৃত্ব ও নিরাপত্তা বাহিনী শুরুতে হামলার ভয়াবহতা বুঝতে ব্যর্থ হয়। যখন তারা কাবায় টহল দিতে যায়, গুলিবর্ষণের মুখে পড়ে। পরে ন্যাশনাল গার্ড ভারী অস্ত্র ও সেনা নিয়ে এসে বিদ্রোহীদের প্রতিহত করে। অস্ত্রধারীরা কালো ধোঁয়া তৈরি করে নিজেদের সুরক্ষা করলেও, প্রায় এক সপ্তাহের কঠোর লড়াই শেষে তারা পরাজিত হয়।
ফরাসি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় সৌদি বাহিনী গ্যাস এবং গ্রেনেড ব্যবহার করে বিদ্রোহীদের নিশ্চিহ্ন করে। এই সংঘর্ষে শতাধিক লোক নিহত হয়।
জুহায়মান ও তার প্রধান অনুসারীকে গ্রেফতার করে এবং পরবর্তীতে প্রকাশ্যে তাদের ফাঁসি দেওয়া হয়। এই ঘটনাটি সৌদি আরবের আধুনিকায়নের পথকে ব্যাহত করে এবং দেশটি দীর্ঘকাল রক্ষণশীল পথে ফিরে যায়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে আবার কিছু পরিবর্তনের সূচনা দেখা যায়।
কাবা শরীফের এই হামলা ইসলামের পবিত্রতম স্থানকে শঙ্কিত করে এবং বিশ্ব মুসলমানদের মধ্যে এক গভীর ছাপ ফেলে। সেই ভয়াল দিন আজও স্মরণীয়।