আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
হোয়াইট হাউসে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সম্মানে আয়োজিত বিশেষ নৈশভোজে অংশ নিয়েছেন মার্কিন ব্যবসায়িক জগতের অন্যতম আলোচিত ব্যক্তিত্ব ইলন মাস্ক। সাম্প্রতিক সময়ে মাস্ক ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পর্কের টানাপোড়েনের পর জনসম্মুখে এটি ছিল তাদের দ্বিতীয় উপস্থিতি, যা দুই পক্ষের সম্পর্কের বরফ গলতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়— এই নৈশভোজ কূটনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর পাশাপাশি ট্রাম্প ও মাস্কের দীর্ঘদিনের অস্বস্তিকর সম্পর্কেও আসতে পারে নতুন মোড়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্প প্রশাসনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। সে সময় ইলন মাস্ককে ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’ বা ডিওজিই’র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেন ট্রাম্প। ফেডারেল সরকারের ব্যয় কমানোর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও দেওয়া হয় তাকে। এর আগে ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচারণায় বড় অঙ্কের অর্থায়ন করেন মাস্ক।
তবে বছর শুরুর দিকেই দুইজনের মধ্যে তৈরি হয় বিরোধ। ট্রাম্পের কর ও ব্যয় সংক্রান্ত বিলকে “অর্থনৈতিকভাবে বেপরোয়া” বলে সমালোচনা করেন মাস্ক। এমনকি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনাও প্রকাশ্যে আনেন তিনি। জবাবে ট্রাম্প সতর্ক করে বলেন— ফেডারেল সরকার থেকে মাস্কের বিভিন্ন কোম্পানি যে বিলিয়ন ডলারের ভর্তুকি পেয়ে থাকে, তা তিনি বন্ধ করে দেবেন।
এই টানাপোড়েনের প্রভাব পড়ে মাস্কের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি, টেসলার শেয়ারদর ও ব্যবসায়িক অবস্থানের ওপর। ফলে দু’জনকে দীর্ঘসময় জনসম্মুখে একসঙ্গে দেখা যায়নি। সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে রক্ষণশীল কর্মী চার্লি কার্কের স্মরণসভায় ট্রাম্পের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত করমর্দন করেছিলেন মাস্ক।
এদিকে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে সৌদি আরবের অবস্থান আরও মজবুত করতে ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে ওয়াশিংটন সফর করছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তার সম্মানে এই নৈশভোজ আয়োজন করে হোয়াইট হাউস। এতে ইলন মাস্ক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পর্তুগিজ ফুটবল তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহী জেনসেন হুয়াং।
বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি যুবরাজের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠতা মধ্যপ্রাচ্য–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলতে পারে। বিশেষত প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও জ্বালানি খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হতে পারে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে ইলন মাস্কের উপস্থিতি ভবিষ্যতে নীতি প্রণয়ন ও কৌশলগত সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এই নৈশভোজকে তাই শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি সম্পর্ক, প্রযুক্তি খাতের ভবিষ্যৎ এবং ট্রাম্প–মাস্ক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।