এশিয়ান পোস্ট ডেস্ক
ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগর সংলগ্ন নওগাঁও থানায় জব্দ করা বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক সামগ্রী পরীক্ষার সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ৯ জন নিহত এবং আরও ২৯ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে ঘটে যাওয়া এ মর্মান্তিক ঘটনা মুহূর্তেই গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় থানার একটি বড় অংশ ধসে পড়ে এবং আশপাশের ভবন ও স্থাপনাও কেঁপে ওঠে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই পুলিশ সদস্য এবং ফরেনসিক টিমের কর্মকর্তারা। তারা উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক সামগ্রীগুলো পরীক্ষা ও নিষ্ক্রিয় করার দায়িত্বে ছিলেন। শ্রীনগর প্রশাসনের দুই কর্মকর্তা ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। কর্তব্যরত অবস্থায় এভাবে বহু অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞের মৃত্যু স্থানীয় প্রশাসনকে গভীর শোকে নিমজ্জিত করেছে।
পুলিশ জানায়, সম্প্রতি হরিয়ানার ফরিদাবাদ থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক সামগ্রী উদ্ধার করা হয়। সেগুলো নিরাপত্তার স্বার্থে জম্মু-কাশ্মীরের নওগাঁও থানায় আনা হয়েছিল। নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ফরেনসিক টিম ও পুলিশ সদস্যরা সেগুলো পরীক্ষা ও নিষ্ক্রিয় করার কাজ করছিলেন। কিন্তু পরীক্ষা চলাকালীন মুহূর্তেই হঠাৎ ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণটি এতটাই তীব্র ছিল যে কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। তাদের দ্রুত চিকিৎসার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৯২ বেস হাসপাতাল এবং শের-ই-কাশিম ইন্সটিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এসকেআইএমএস)-এ ভর্তি করা হয়েছে। অত্যন্ত সংকটাপন্ন বেশ কয়েকজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। ডাক্তারদের একটি বিশেষজ্ঞ টিম চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন।
বিস্ফোরণের পরপরই শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা নওগাঁও থানায় ছুটে যান এবং ঘটনাস্থল ঘিরে ফেলা হয়। বিস্ফোরণের পেছনের সুনির্দিষ্ট কারণ অনুসন্ধানের জন্য উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফরেনসিক দলও পুনরায় ঘটনাস্থলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উদ্ধার করা বিস্ফোরকগুলো ঠিক কী ধরনের উপাদানে তৈরি ছিল এবং কীভাবে এই ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া ঘটল, তা এখন তদন্তের মূল কেন্দ্রবিন্দু।
এদিকে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘটনার পর আতঙ্কে রয়েছেন। থানার আশপাশের দোকানপাট দ্রুত বন্ধ হয়ে যায় এবং লোকজন নিরাপদ দূরত্বে সরে যান। রাতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে কেউ ভিড় বা অযথা গুজব ছড়াতে না পারে। স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থল থেকে সাধারণ মানুষের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন থেকে বিস্তারিত প্রতিবেদন চেয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিশেষজ্ঞরাও তদন্তে সহযোগিতা করতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে সেজন্য বিস্ফোরক সামগ্রী ব্যবস্থাপনায় নতুন গাইডলাইন তৈরি করার বিষয়েও আলোচনায় রয়েছে।
নওগাঁও থানায় ঘটে যাওয়া এই বিস্ফোরণ আবারও স্মরণ করিয়ে দিল যে উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক সামগ্রী নিষ্ক্রিয়করণ কতটা ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটি কতটা উচ্চমাত্রার নিরাপত্তা ব্যবস্থার দাবি রাখে। নিহতদের সহকর্মীরা ও স্থানীয় বাসিন্দারা শোক প্রকাশ করেছেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছেন।
এশিয়ান পোস্ট / এফআরজে