আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
গত দেড় বছরের মধ্যে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর ২৭৯ জন সদস্য আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন; এ তালিকায় ৩৬ জনের মারা যাওয়ার তথ্য অন্তর্ভুক্ত আছে। কন অনুসন্ধান ও তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে—গাজায় চলমান সময়ের মধ্যে মানসিক চাপ ও যুদ্ধাবসাদের ঊর্ধ্বগতি আত্মহননের প্রবণতা বাড়িয়েছে, যা সেনাবাহিনীর ভেতরে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ইসরায়েলের একজন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত মোট ২৭৯ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন; এর মধ্যে ৩৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। আরও বলা হয়েছে, ২০১৭ থেকে ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত মোট ১২৪ জন সেনা আত্মহত্যা করেছেন—এদের মধ্যে ৬৮% বাধ্যতামূলক সার্ভিসপ্রাপ্ত, ২১% রিজার্ভ এবং ১১% পেশাদার বা স্থায়ী সদস্য।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে সংঘটিত তীব্র সংঘর্ষ ও যুদ্ধে রিজার্ভ সৈন্যদের ব্যাপকভাবে মোতায়েন করা হয়। বিশেষভাবে গাজার অভিযানে অংশগ্রহণকারী বহু রিজার্ভ ও সক্রিয় সৈন্য এখন মানসিকভাবে অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। একাধিক রাজনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষক মনে করেন—ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, যুদ্ধকালীন আচরণ, জিম্মি-হত্যা ও গৃহহীনতা এই মানসিক সংকটকে ত্বরান্বিত করেছে।
ইসরায়েলি সংসদের এক সদস্য ও বিশ্লেষক ওফের কাসিফ মন্তব্য করেছেন, “সেনাদের মধ্যে আত্মহত্যার মহামারি দেখা দিয়েছে। যুদ্ধের পর এটি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে চিন্তা করা হচ্ছে। আমাদের সেনাদের মানসিক সহায়তার জন্য অবিলম্বে কার্যকর সেবা গড়ে তুলতে হবে; যুদ্ধ বন্ধ করে সত্যিকারের শান্তি প্রতিষ্ঠাই দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।” তিনি সরকারকে নিন্দা করে বলেন, “যুদ্ধ শেষে সেনাদের মানসিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ কৌশল এবং সহায়তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।”
সামরিক মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন—যুদ্ধজটিলতা, ট্রমা, দীর্ঘস্থায়ী ঘুমহীনতা, অপরাধবোধ, এবং পরিবার-সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মিলিয়ে আত্মহননের ঝুঁকি বাড়ায়। তারা চাইছেন দ্রুত মানসিক স্বাস্থ্য সেবা, কাউন্সেলিং, ক্রাইসিস হটলাইন ও পুনর্বাসন প্রোগ্রাম জোরদার করা হোক।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সামরিক মানসিক স্বাস্থ্য সংকটকে একক দেশীয় সমস্যা হিসেবে দেখা উচিত নয়—এটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ ও মানুষের উপর প্রভাবের একটি যৌথ মানবিক ও স্বাস্থ্যগত বিষয়। তারা তাত্ক্ষণিক এবং দীর্ঘমেয়াদি মানসিক পুনর্বাসন ও পারিবারিক সহায়তার ওপর জোর দিচ্ছেন।
ইসরায়েলের সামরিক কর্তৃপক্ষ এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া প্রদান করেনি; তবে সংসদীয় ও বেসরকারি রিপোর্টগুলোতে পাওয়া তথ্য উদ্বেগজনক এবং তা উপেক্ষা করা কঠিন। যুদ্ধবিরতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি সমাধান এবং সৈন্যদের জন্য সম্মিলিত মানসিক-সামাজিক সহায়তা ব্যবস্থা জরুরি বলা হচ্ছে।
এশিয়ানপোস্ট /এফআরজে