অনলাইন ডেস্ক
বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে ম্যালেরিয়ায়। বৈশ্বিকভাবে এটি এখনো অন্যতম প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ হিসেবে রয়ে গেছে। বিশেষ করে আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলোতে এর প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা এবং মশার ওষুধ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে ম্যালেরিয়া এখন বিশ্বের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ২৫ কোটি এবং মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ২০ হাজার মানুষের। আফ্রিকার দেশগুলোতেই এর ৯৫ শতাংশ সংক্রমণ ঘটেছে, যেখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ নাইজেরিয়া, কঙ্গো, উগান্ডা ও মোজাম্বিক।
বাংলাদেশেও এই রোগ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রতি বছর শত শত মানুষ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজারের বেশি মানুষ, যার মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ২৫ জন। যদিও সরকারি উদ্যোগে সচেতনতা কর্মসূচি ও ওষুধ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে, তবুও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এখনো ঝুঁকি রয়ে গেছে।
ম্যালেরিয়া একটি প্রাণঘাতী রোগ যা প্লাজমোডিয়াম নামক পরজীবীর কারণে হয়। এটি মূলত স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। সংক্রমণের কয়েক দিন পর থেকেই জ্বর, মাথা ব্যথা, কাঁপুনি ও ঘাম হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে কিডনি বিকল, লিভার জটিলতা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যালেরিয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন ওষুধ প্রতিরোধ ক্ষমতা। বহু বছর ধরে ব্যবহৃত অ্যান্টি-ম্যালেরিয়া ওষুধের বিরুদ্ধে অনেক ম্যালেরিয়া জীবাণু এখন প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। ফলে প্রচলিত চিকিৎসা কার্যকর থাকছে না। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উষ্ণতা ও আর্দ্রতা বাড়ায় মশার প্রজনন ক্ষেত্র বেড়ে যাচ্ছে, যা সংক্রমণ বিস্তারের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছে।
তবে আশার খবরও আছে। সম্প্রতি আফ্রিকা ও এশিয়ার কয়েকটি দেশে দুটি ম্যালেরিয়া টিকা— RTS,S ও R21/Matrix-M— পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ভালো ফলও মিলছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব টিকা বিশ্বব্যাপী প্রয়োগ করা গেলে আগামী এক দশকে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশে সম্ভব হবে।
বাংলাদেশেও টিকার প্রস্তুতি চলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পার্বত্য এলাকায় প্রাথমিক টিকা কার্যক্রম চালুর বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে টিকার পাশাপাশি সচেতনতা ও পরিবেশ নিয়ন্ত্রণই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা বলে মত দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তাদের পরামর্শ, ঘরবাড়িতে মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস, মশারি ব্যবহার, সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ এবং জলাবদ্ধতা দূরীকরণের মাধ্যমে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখা সম্ভব।
বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর আহ্বান— ম্যালেরিয়া নির্মূল এখন শুধু চিকিৎসার বিষয় নয়, বরং এটি একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ। একে মোকাবিলায় প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, গবেষণায় বিনিয়োগ এবং জনগণের সচেতন অংশগ্রহণ।
AP/ RJ