আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ইসরায়েলি বাহিনী বারবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে বলে অভিযোগ করেছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা। চলতি মাসের শুরু থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি এখন পর্যন্ত ৪৭ বার ভঙ্গ করেছে ইসরায়েল। এর ফলে ৩৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং অন্তত ১৪৩ জন আহত হয়েছেন বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলি সরকার জানিয়েছে, গাজা ও মিশরের মধ্যবর্তী রাফা সীমান্ত ক্রসিং ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ বন্ধ থাকবে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু অভিযোগ করেছেন, হামাস জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
অন্যদিকে হামাস জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যে আরও দুই জিম্মির মরদেহ ফেরত দিয়েছে। সংগঠনটি অভিযোগ করেছে, নেতানিয়াহু ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ব্যাহত করার জন্য তুচ্ছ অজুহাত খুঁজছেন।
যুক্তরাষ্ট্র, মিশর, কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় গাজায় এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও রাফা সীমান্ত ক্রসিং এখনো বন্ধ। গাজার দক্ষিণে মিশর সীমান্তে অবস্থিত মাত্র ৩০০ মিটার দীর্ঘ এই পথটি ফিলিস্তিনিদের জন্য বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র “লাইফলাইন”। মানবিক সহায়তা, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও খাদ্য সরবরাহের মূল প্রবেশদ্বারও এটি।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাতে হামাস জানায়, রাফাহ ক্রসিং বন্ধ থাকায় মৃতদেহ উদ্ধার ও স্থানান্তর কার্যক্রমে বড় ধরনের বিলম্ব হচ্ছে। গাজার অভ্যন্তরে এখনও অনেক মৃতদেহ পড়ে আছে, যা উদ্ধার সম্ভব হচ্ছে না। হামাসের মতে, রাফাহ ক্রসিং পুনরায় খোলা না হলে মৃতদেহ হস্তান্তর ও বন্দি বিনিময় প্রক্রিয়া কার্যকর করা যাবে না।
অন্যদিকে ইসরায়েল দাবি করছে, হামাস তাদের শর্ত পূরণ করেনি। বিশেষ করে নিহত জিম্মিদের মৃতদেহ ফেরত না দেওয়ার অজুহাতে রাফাহ ক্রসিং বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো বলছে, উভয় পক্ষের অনমনীয় অবস্থানের কারণে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া হামাস-ইসরায়েল সংঘাতে এখন পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ৬৮ হাজার ১১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ। এদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। গাজা নগরীতে চিকিৎসা ব্যবস্থা ধসে পড়েছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটে কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জনকে জিম্মি করা হয়। সেই ঘটনার পর থেকেই ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইসরায়েলি সেনারা নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনের শামিল। জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দলও জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির পরও প্রতিদিনই গাজায় গুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে অবিশ্বাসের দেয়াল এতটাই পুরু হয়ে গেছে যে, স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এশিয়ানপোস্ট / আরজে