আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বেনিনে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। রোববার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে একদল সৈন্য নিজেদের মিলিটারি কমিটি ফর রিফাউন্ডেশন (সিএমআর) পরিচয়ে জানায়, তারা প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস তালনকে অপসারণ করে দেশের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়েছে।
সেনাসদস্যদের দাবি, তারা বৈঠক করে প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্টের পদ থেকে তালনকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট তালন টানা ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন এবং তাকে আগামী বছরের এপ্রিলে পদত্যাগ করার কথা ছিল। তবে সেনাবাহিনীর এই ঘোষণার পর তার বর্তমান অবস্থান ও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না—সে বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য দেয়নি সিএমআর।
অভ্যুত্থানের এ ঘোষণার পর বেনিনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দেশটিতে নিযুক্ত ফরাসি দূতাবাস এক্স–এ দেওয়া পোস্টে জানায়, প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনের কাছে ক্যাম্প গুয়েজো এলাকায় গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। দূতাবাস দেশটিতে থাকা ফরাসি নাগরিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে ঘরে অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছে।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানায়, প্যাট্রিস তালন নিরাপদে আছেন এবং সেনাবাহিনীর নিয়মিত বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানায়, টেলিভিশন স্টেশনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে অল্পসংখ্যক বিদ্রোহী সেনা, তবে অন্যান্য শহর এবং পুরো দেশ স্থিতিশীল রয়েছে।
কার্যালয়ের মন্তব্য অনুযায়ী, বেনিনের নিয়মিত সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানচেষ্টা প্রতিরোধে কাজ করছে এবং পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে।
অভ্যুত্থানের দাবি করা সেনাসদস্যদের পক্ষ থেকে দেশের সব সীমান্ত বন্ধ ও রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে দেশজুড়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক যাতায়াত কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেনিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওলুশেগুন আজাদি বাকারি বলেন, দেশে একটি অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সেনাবাহিনীর বড় অংশ ও ন্যাশনাল গার্ড এখনও প্রেসিডেন্টের প্রতি অনুগত। তার দাবি, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও রাজধানীর নিরাপত্তা নিয়মিত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
পরিস্থিতির মোড় কোনদিকে যাবে তা নিয়ে দেশজুড়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সেনাবাহিনীর একটি অংশ ক্ষমতাচ্যুতির ঘোষণা দিলেও সরকারপক্ষ দাবি করছে, বিদ্রোহীদের সংখ্যা কম এবং তারা দমন হওয়ার পথে। এর মধ্যেই সীমান্ত বন্ধ, রাজনৈতিক স্থগিতাদেশ এবং রাজধানীর কিছু এলাকায় গুলিবিনিময়ের খবর পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বেনিন দীর্ঘদিন তুলনামূলক স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্ষমতা–কেন্দ্রীকরণ ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে। অভ্যুত্থানচেষ্টা সফল হবে নাকি সরকারপন্থী বাহিনী নিয়ন্ত্রণ পুনর্গঠন করতে পারবে—তা নির্ভর করছে সামরিক বাহিনীর ভেতরের আনুগত্য এবং পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনের ওপর।