আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস অস্ত্র সমর্পণের বিষয়ে নতুন শর্ত ঘোষণা করেছে। গোষ্ঠীর শীর্ষ নেতা ও মুখপাত্র খলিল আল হায়া স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলের দখলদারিত্বের সম্পূর্ণ অবসান ছাড়া হামাস কোনো ধরনের অস্ত্র জমা দেবে না। শনিবার এএফপিকে দেওয়া এক লিখিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আমাদের অস্ত্র দখলদার ও আগ্রাসী শক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। যদি গাজায় স্থায়ীভাবে দখলদারিত্বের অবসান ঘটে, সেক্ষেত্রে আমরা নিজেদের যাবতীয় অস্ত্র (ফিলিস্তিন) রাষ্ট্রের বৈধ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেবো।”
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুসারে গত ১০ অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি চলছে গাজায়। এই পরিকল্পনা তিনটি ধাপে বিভক্ত। প্রথম ধাপে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে জঙ্গি-বন্দি বিনিময় এবং ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন থামানোর কথা উল্লেখ ছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ে হামাস তার অস্ত্র আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে জমা দেবে এবং গাজার নিরাপত্তার জন্য একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠন করা হবে। সেই সঙ্গে গাজার প্রশাসন চালানোর জন্য একটি বেসামরিক সরকার গঠনের পরিকল্পনাও রয়েছে। তৃতীয় ধাপে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার পুনর্গঠন শুরু হওয়ার কথা বলা হয়েছে।
পরিকল্পনার সময়সীমা অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় প্রায় শেষ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় পর্যায় শুরু করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে অভিযোগ উঠেছে যে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ পুরোপুরি মানেনি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অন্তত ৩৬০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
খলিল আল হায়া আন্তর্জাতিক বাহিনী প্রসঙ্গে বলেন, “গাজার বাসিন্দাদের জন্য যে আন্তর্জাতিক বাহিনী গঠনের কথা বলা হয়েছে, আমরা তাতেও একমত। তবে আমাদের শর্ত হলো— সেই বাহিনী জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে এবং বাহিনীর কর্মকর্তা-সদস্যরা জাতিসংঘের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।” তিনি আরও বলেন, হামাস কখনোই এমন কোনো চুক্তিতে যেতে রাজি নয় যা গাজার স্বাধীনতা, নিরাপত্তা ও ফিলিস্তিনিদের অধিকার ক্ষুণ্ন করবে।
গাজার নাগরিকদের অভিযোগ, যুদ্ধবিরতির পরও ইসরায়েলের বিমান হামলা, ড্রোন টহল এবং স্থলচলাচলের বিধিনিষেধ বহাল রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় মানবিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক এবং বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। তারা বলছে, অস্ত্রসমর্পণের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নযোগ্য হবে না যতক্ষণ না গাজার ওপর আরোপিত অবরোধ সম্পূর্ণভাবে তুলে নেওয়া হয়।
এএফপির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হামাসের এই অবস্থান ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপের বাস্তবায়নকে আরও জটিল করে তুলবে। মার্কিন প্রশাসন চায়, দ্রুত অস্ত্রসমর্পণ ও আন্তর্জাতিক বাহিনী নিয়োজিত করে গাজার নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা হোক। কিন্তু হামাস বলছে, রাজনৈতিক অধিকারের নিশ্চয়তা ছাড়া তারা কোনোভাবেই অস্ত্র জমা দেবে না।
গাজা উপত্যকায় এখনও মানবিক সংকট চরম আকারে। ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো, ধ্বংসস্তূপ, খাদ্য ও ওষুধ সংকট—সব মিলিয়ে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের জীবন অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠেছে। হামাসের নতুন শর্ত ঘোষণার পর গাজা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা আরও বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র : এএফপি