আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইশহাক দার বলেছেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও চীনকে নিয়ে ত্রিদেশীয় জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং এতে অন্য দেশও যুক্ত করে জোটের পরিধি বাড়ানো যেতে পারে। তিনি জানিয়েছেন, এই অঞ্চলের বাইরে অন্য দেশকেও যুক্ত করা সম্ভব। এই প্রস্তাব এমন সময় এসেছে যখন আঞ্চলিক উত্তেজনা বাড়ছে।
ইশহাক দার ইসলামাবাদ কনক্লেভ ফোরামে বলেন, “আমরা নিজেরা লাভবান হয়ে অন্যের ক্ষতি হওয়ার বিপক্ষে। আমরা সবসময় সংঘাতের বদলে সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছি।” নতুন জোট গঠনের মাধ্যমে পাকিস্তান মূলত সার্কের বিকল্প কোনো কাঠামো তৈরি করতে চায়, কারণ ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনার কারণে সার্ক প্রায় অকার্যকর হয়ে আছে।
গত জুনে চীন-পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কূটনীতিকরা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের জীবনমান উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন। এই আলোচনার উদ্দেশ্য ছিল কোনো তৃতীয় দেশকে লক্ষ্য করা নয়।
ইশহাক দার বলেন, “আমাদের জাতীয় উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক অগ্রাধিকার কখনো অন্যের অনমনীয়তার কাছে জিম্মি হওয়া উচিত নয়। দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে সংলাপ গত ১১ বছর ধরে স্থগিত আছে। পাকিস্তান এমন এক দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন দেখে যেখানে দ্বন্দ্বের বদলে সহযোগিতা ও শান্তি থাকবে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব হবে এবং সম্মান বজায় থাকবে।
লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক রাবেয়া আক্তার মন্তব্য করেন, পাকিস্তানের এই উদ্যোগ বাস্তবিকের চেয়ে উচ্চাকাঙ্খী। তবে এটি ইঙ্গিত দেয় যে সার্ক অকার্যকর হওয়ায় পাকিস্তান আঞ্চলিক সহযোগিতা বহুমুখী করতে চায়।
সার্ক ১৯৮৫ সালে গঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিল বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। আফগানিস্তান ২০০৭ সালে যোগ হয়। সার্কের লক্ষ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক ও বাণিজ্য বৃদ্ধি করা। তবে ভারত ও পাকিস্তানের দীর্ঘকালীন শত্রুতার কারণে সার্ক কার্যকর হয়নি। ২০১৬ সালে পাকিস্তানের ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ভারতের কাশ্মিরে হামলার অভিযোগে ভারত অংশ নেয়নি।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য খুবই কম। পুরো অঞ্চলের মোট বাণিজ্যের মাত্র পাঁচ শতাংশ হয় সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সরাসরি বাণিজ্য সবচেয়ে কম। ২০২৪ সালে তারা মাত্র ১.২ বিলিয়ন ডলারের সরাসরি বাণিজ্য করেছে।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্সের শাবাব ইনাম খান বলেন, “পাকিস্তানের প্রস্তাব উচ্চাকাঙ্খী হলেও প্রয়োজনীয়। দক্ষিণ এশিয়ায় বাস্তবসম্মত আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং ছোট, কার্যকর উদ্যোগগুলো গঠন করতে ব্যর্থতা ঘটেছে।”
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি বলেন, নতুন আঞ্চলিক জোটের সুযোগ রয়েছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় সার্কের নিরব মৃত্যুর কারণে পাকিস্তানের ত্রিদেশীয় উদ্যোগের পথ তৈরি হয়েছে। তবে অন্যান্য দেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এতে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা সীমিত।