আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ভারতের লোকসভায় শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের পুশব্যাক ইস্যুতে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বাঙালি ভাসমান শ্রমিকদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ নিয়ে আলোচনা চলাকালীন তৃণমূল কংগ্রেস ও ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাংসদরা সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। এদিন লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গের বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় সরব হন। তার বক্তব্য চলাকালীন বিজেপির সাংসদরা একাধিকবার বাধা দেন।
বাধার কারণে প্রতিবাদ জানিয়ে শতাব্দী রায় মহুয়া মৈত্রকে সঙ্গে নিয়ে স্পিকারের আসনের কাছে চলে যান। এরপর স্পিকার নির্ধারিত মাইকের মাধ্যমে বক্তব্য দেন মহুয়া মৈত্র। পরবর্তীতে তারা নিজেদের আসনে ফিরে যান। এরপর বিজেপি সাংসদ সম্বিত পাত্র শতাব্দী ও তৃণমূলের সমালোচনা করে পাল্টা বক্তব্য দেন।
ঘটনার শুরু জিরো আওয়ারে। বাংলায় কথা বলা শ্রমিকদের বাংলাদেশে পাঠানো নিয়ে শতাব্দী রায় বক্তব্য দেন। তিনি দাবি করেন, সম্প্রতি ওড়িশা থেকে এক ব্যক্তিকে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছে। সভা পরিচালনা করেন কৃষ্ণপ্রসাদ তেনেট্টি। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পরও শতাব্দী বক্তব্য চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন বিজেপি সাংসদরা একাধিকবার তার বক্তৃতায় বাধা দেন।
শেষমেশ শতাব্দী ও মহুয়া মৈত্র স্পিকারের আসনের খুব কাছে চলে যান। বিজেপির প্রবীণ সাংসদ জগদম্বিকা পাল পরিস্থিতি শান্ত করতে দুই নারী সাংসদের সঙ্গে কথা বলেন। পরবর্তীতে তারা নিজেদের আসনে ফিরে যান।
ভাষণের শেষ দিকে শতাব্দী রায় বলেন, ‘বাংলায় কথা বললে যদি বাঙালিদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়, তবে হিন্দি-উর্দুতে কথা বলার কারণে বিজেপি সাংসদদেরও পাকিস্তানে পাঠানো উচিত।’ এই মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান বিজেপির সাংসদরা। তারা নিজেদের আসনে বসেই কটাক্ষ করতে থাকেন।
এরপর বিজেপি পক্ষ থেকে সম্বিত পাত্র বক্তব্য দেন। তিনি দাবি করেন, ওড়িশা থেকে বাংলার কাউকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়নি। তিনি বাংলা ও ওড়িশার দীর্ঘকালীন সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। সম্বিত বলেন, ‘ওড়িশার সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক আজকের নয়, বহু যুগ ধরে চলে আসছে। বাঙালিদের আমরা নিজের ভাই মনে করি। বাংলায় কথা বলা মানুষের প্রতি আমাদের ভালোবাসা রয়েছে। তবে ওড়িশার সরকার বা কোনো সাংসদ রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রতি সহমর্মী নয়। ওড়িশায় তাদের থাকার কোনো জায়গা নেই।’
ঘটনাটি ভারতের লোকসভায় নতুন রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি সাংসদরা গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুতে বাধা সৃষ্টি করেছেন। অন্যদিকে বিজেপি বলছে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের দিক বিবেচনায় তাদের বক্তব্য ছিল সঠিক এবং ওড়িশার সরকারের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরার প্রচেষ্টা ছিল।
এ ঘটনা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মানবাধিকার ও সীমান্ত নীতি নিয়ে নতুনভাবে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। তৃণমূল ও বিজেপির সাংসদদের মধ্যকার এই উত্তেজনা আগামীকালেও রাজনৈতিক বিতর্কের সূত্রপাত করবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।