আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
পাকিস্তানি সেনাদের হামলায় আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশের বোলদাক বিভাগে চারজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। গতকাল রাতে দুই দেশের সীমান্তাঞ্চলে হঠাৎ তীব্র গোলাগুলি শুরু হলে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়ে টানা দুই ঘণ্টা ধরে গোলাগুলি ও কামান হামলার শব্দ শোনা যায়। সীমান্ত পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই উত্তপ্ত থাকলেও সাম্প্রতিক আলোচনার পরও এমন সহিংসতায় উদ্বেগ বেড়েছে।
কাবুল জানিয়েছে, নিহত চারজনই সাধারণ মানুষ। কামানের গোলা সরাসরি সাধারণ মানুষের বাড়িতে আঘাত হানায় হতাহতের ঘটনা ঘটে। কান্দাহার প্রদেশের বোলদাক বিভাগের গভর্নর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। স্থানীয়রা জানান, হামলার সময় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরিবারগুলো নিজেদের নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় খুঁজতে থাকে। গোলাগুলির তীব্রতায় সীমান্ত পয়েন্ট বন্ধ হয়ে যায় এবং বাণিজ্যিক পরিবহন কার্যক্রমও স্থগিত হয়ে পড়ে।
গত অক্টোবর থেকেই পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্ত উত্তেজনায় রয়েছে। ওই মাসের বড় ধরনের সংঘর্ষে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হন। পরবর্তী সময়ে কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি শান্ত হতে শুরু করেছিল। তবে তা স্থায়ী হয়নি। দুইদিন আগে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই দেশ আবারও শান্তি আলোচনায় বসে। যদিও সেই বৈঠক থেকে কোনো অগ্রগতি পাওয়া যায়নি। আন্তর্জাতিক কূটনীতিকরা মনে করছেন, সীমান্তে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাজনৈতিক আস্থা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও জোরদার করতে হবে।
গত রাতে নতুন করে সংঘর্ষের পর কোন পক্ষ আগে গুলি করেছে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দুই দেশই একে-অপরকে প্রথম গুলি ছোড়ার অভিযোগ করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র মোশারফ জাইদি দাবি করেন, চামান সীমান্তে বিনা উস্কানিতে প্রথমে গুলি করেছে আফগান সেনারা। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানি বাহিনী নিজেদের অবস্থান রক্ষার জন্য পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হয়।
অন্যদিকে আফগানিস্তানের কান্দাহারের তথ্য বিভাগের প্রধান আলী মোহাম্মদ হাকমাল বলেন, পাকিস্তানি সেনারা প্রথমেই হালকা ও ভারী কামান ব্যবহার করে হামলা চালায়। কামানের গোলা বেসামরিক মানুষের বাড়িতে পড়ায় হতাহত হয়। তিনি জানান, সীমান্তের কয়েকটি গ্রামে ঘরবাড়িতেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ তালিকা প্রস্তুত করছে।
দুই পক্ষই পরে সংঘর্ষ থামাতে সম্মত হয়েছে বলে জানান আলী মোহাম্মদ হাকমাল। যদিও সীমান্তে উত্তেজনা রয়ে গেছে এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিস্থিতি আরও বিস্তৃত সংঘাতে রূপ নিতে পারে যদি দ্রুত কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা কমানো না যায়। সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দারা বারবার এমন সংঘাতের কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাদের বাণিজ্য ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছে। স্থানীয় বাজারে প্রয়োজনীয় পণ্যের সংকটও তৈরি হয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দুই দেশের সাম্প্রতিক সম্পর্কের টানাপড়েন, সীমান্ত নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম নিয়ে অবিশ্বাস পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। সীমান্তে একের পর এক আহত–নিহতের ঘটনা মানবিক সংকটকে গভীর করছে এবং অঞ্চলজুড়ে অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। তাই স্থায়ী শান্তির জন্য দুই দেশের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠন এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনা নিয়ে নতুন কাঠামো তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরছেন বিশ্লেষকরা।
সূত্র: এএফপি