আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে দর্শনার্থীদের সাক্ষাৎ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে দেশটির সরকার। শুক্রবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার। তিনি ইমরান খানকে ‘যুদ্ধ-উন্মাদনায় মগ্ন চরমপন্থি’ বলে উল্লেখ করে জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে তার সঙ্গে কোনো ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বা পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎ এখন থেকে অনুমোদিত নয়।
এর আগে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী ইমরান খানকে ‘মানসিক রোগী’ এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেন। তার এমন মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরকার দর্শনার্থীদের সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয়। জিও টিভির ‘নয়া পাকিস্তান’ অনুষ্ঠানে আতাউল্লাহ তারার বলেন, কয়েদিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ আইন অনুযায়ী হতে হয়, তবে এখন কোনো সাক্ষাৎই অনুমোদিত নয়। তিনি স্পষ্ট করে দেন, কোনো ব্যক্তি যদি জোর করে সাক্ষাৎ করার চেষ্টা করেন বা আন্দোলন করেন, তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, জেলে বসে কোনো শত্রু রাষ্ট্র বা গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের সুযোগ দেওয়া হবে না। সরকারের দাবি, ইমরান খান কারাগারে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন উপায়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চেয়েছেন, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
দুই দিন আগে ইমরান খানের বোন উজমা খান কারাগারে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় তিনি জানান, সেনাপ্রধান অসীম মুনিরের কার্যক্রম ইমরান খানকে ‘ক্ষুব্ধ’ করছে। এর আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে ইমরান খানের সঙ্গে কারাগারে কাউকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি, যার কারণে ক্ষোভ তৈরি হয় এবং পিটিআই পক্ষ থেকে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। এরপরই তার বোন উজমা খানকে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হয়।
৭৩ বছর বয়সী ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে বিভিন্ন মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে বন্দি। তিনি দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ফাঁসসহ একাধিক মামলায় বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছেন। পিটিআই দাবি করেছে, তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে কারাগারে রাখা হচ্ছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো সাজানো। তবে সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
ইমরান খানের সাক্ষাৎ নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। পিটিআই বলছে, সরকার তাকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখার চেষ্টা করছে যাতে তিনি কোনো রাজনৈতিক বার্তা দিতে না পারেন। অন্যদিকে সরকার বলছে, ইমরান খান ও তার সহযোগীরা দেশের স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, তাই নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে পাকিস্তানের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ইমরান খানের সঙ্গে সম্পূর্ণ সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করাকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছে। তারা বলছে, কোনো বন্দিকেই তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিরত রাখা যায় না, যদি না গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকে।
সূত্র: জিও টিভি।