আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ নেতৃত্বাধীন সরকার দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনিরকে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের প্রথম চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস (সিডিএফ) হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্রধারী পাকিস্তানে নতুন করে সৃষ্ট এই গুরুত্বপূর্ণ পদে তার মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ বছর। এ নিয়োগের মধ্য দিয়ে তিন বাহিনীর সর্বোচ্চ দায়িত্ব এবং সামরিক কৌশলগত কাঠামোর সর্বময় নিয়ন্ত্রণ এখন অসীম মুনিরের হাতে চলে এসেছে।
দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক্সে জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের পাঠানো সারসংক্ষেপ অনুমোদন করে অসীম মুনিরকে চিফ অব আর্মি স্টাফ (সিওএএস) এবং সিডিএফ পদে নিয়োগ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি। এতে বলা হয়, তিনি ৫ বছরের জন্য এই দুটি দায়িত্ব পালন করবেন।
সিডিএফ পদটি তিন বাহিনীর সর্বময় নজরদারি ছাড়াও জাতীয় কৌশলগত কমান্ডের ওপরও কর্তৃত্ব দেয়। এই কমান্ডই পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও কৌশলগত সামরিক পরিকল্পনার নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে দেশটির নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাঠামোয় অসীম মুনির বর্তমানে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
নতুন পদে তাকে আইনি সুরক্ষাও দেওয়া হয়েছে। সিডিএফ হিসেবে তিনি প্রেসিডেন্টের কাছাকাছি মর্যাদা পাবেন এবং প্রেসিডেন্টের মতো আজীবন যেকোনো আইনি মামলার হাত থেকে রেহাই পাবেন। এই সুরক্ষা বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর প্রধানদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। পাঁচ বছর শেষে তিনি মেয়াদ বাড়াতে চাইলে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে হবে— তবে তার বর্তমান অবস্থান বিবেচনায় সেই অনুরোধ নাকচ হওয়ার সম্ভাবনা নগন্য।
নতুন সংশোধনী অনুসারে সামরিক বাহিনীর ওপর বেসামরিক সরকারের তদারকি ক্ষমতাও কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এখন থেকে ভাইস চিফ অব আর্মি স্টাফ (ভিসিওএএস) পদে নিয়োগের সুপারিশ করবেন সিডিএফ; এরপর ফেডারেল সরকার সেই সুপারিশ অনুমোদন করবে। আগের কাঠামোতে এই নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বেসামরিক সরকারের হাতে ছিল।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশটি বেসামরিক ও সামরিক শাসনের দ্বৈত বাস্তবতা মোকাবিলা করে আসছে। দেশটির শেষ সামরিক শাসক পারভেজ মুশাররফ ১৯৯৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এরপর বেসামরিক সরকার ক্ষমতায় এলেও সেনাবাহিনী রাজনীতি, নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় কাঠামো এখনো “হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা”র মধ্য দিয়ে পরিচালিত হয়।
অসীম মুনিরকে অধিক ক্ষমতা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দেশটিতে আলোচনা চলছিল। গত ২৯ নভেম্বর তার সেনাপ্রধানের তিন বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার দিনই নতুন পদে নিয়োগ ঘোষণার কথা ছিল। সবশেষে সংবিধানের ২৭তম সংশোধনীর মাধ্যমে চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস নামে নতুন পদ সৃষ্টি করা হয় এবং আগের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির পদটি বাতিল করা হয়।
চলতি বছর ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত হওয়া অসীম মুনির এখন একাধারে ফাইভ-স্টার ফিল্ড মার্শাল, সিওএএস ও সিডিএফ— পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যিনি শীর্ষ তিনটি সামরিক পদে একইসঙ্গে অধিষ্ঠিত। তিনি দেশটির ইতিহাসে দ্বিতীয় ফিল্ড মার্শাল; এর আগে ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে আইয়ুব খান এই উপাধি লাভ করেছিলেন।