অনলাইন ডেস্ক
ইরানি রিয়ালের দাম রেকর্ড পর্যায়ে পতন করেছে। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) খোলা বাজারে এক মার্কিন ডলারের বিনিময় হার প্রায় ১২ লাখ রিয়াল নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পতনের কারণে এক বাংলাদেশি টাকায় বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার ৭০০ ইরানি রিয়াল পাওয়া যাচ্ছে।
মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ইরানি রিয়ালের দরপতনের প্রধান কারণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এছাড়া ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে পারমাণবিক আলোচনার থমকে যাওয়াও রিয়ালের মূল্য হ্রাসে ভূমিকা রেখেছে।
ইরানে স্থানীয়দের দৈনন্দিন জীবনে এটি প্রবল প্রভাব ফেলেছে। খাবারের দাম ইতিমধ্যেই বেড়ে গেছে এবং সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন জিনিসপত্র ক্রয় করতে সমস্যায় পড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, ১০ হাজার রিয়াল দিয়ে সেখানে এক বোতল পানি কেনা সম্ভব নয়; সর্বোচ্চ একটি চকলেট কেনা যেতে পারে।
৫৩ বছর বয়সী ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ার আলী মোশতাগ বার্তাসংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের জীবন কেবল কঠিন হচ্ছে না, দেশটির পুরোনো অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণেও সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে সরকার কাঠামোগত উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালাতে পারছে না।
যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরান ব্যাপক অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে তেহরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’ নীতি পুনঃপ্রয়োগ করেছেন। এর অংশ হিসেবে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘের মাধ্যমে পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়েও ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রিয়ালের এ পতনের ফলে ইরানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমেও ব্যাঘাত ঘটছে। বিদেশি মুদ্রার অভাবে প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি দেরি হচ্ছে এবং দেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা দুর্বল হচ্ছে।
এদিকে সাধারণ মানুষ উদ্বিগ্ন যে, এ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে আবারও ইরান-ইসরায়েল বা অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। ইতোমধ্যে ২০২৫ সালের জুনে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে ১২ দিন স্থায়ী সীমান্ত সংঘাত হয়েছিল।
ইরানিদের জন্য বর্তমান পরিস্থিতি প্রতিদিনের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। দারিদ্র্য বৃদ্ধি, খাদ্য মূল্যবৃদ্ধি এবং বেসামরিক পণ্যের সীমিত সহজলভ্যতা দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আর পারমাণবিক আলোচনার স্থগিতাদেশ ইরানের মুদ্রা বাজারে স্থিতিশীলতা আনা কঠিন করে তুলেছে। চলতি অবস্থা চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আরও হ্রাস পাবে এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়বে।
এই দরপতনের ফলে ইরানি রিয়ালের প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারের মনোভাবও নেতিবাচক হচ্ছে। ভবিষ্যতে স্থিতিশীলতা আনতে আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রয়োজন।