আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি-বিসাউয়ে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে এবং প্রেসিডেন্ট উমারো সিসোকো এমবালোকে আটক করে একদল সেনা কর্মকর্তা ক্ষমতা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। রাজধানী বিসাউয়ে বিকেল থেকে টানা গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর সরকারি সূত্র আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে যে প্রেসিডেন্টকে সেনারা গ্রেপ্তার করেছে এবং দেশের নিয়ন্ত্রণ এখন সামরিক বাহিনীর হাতে।
অভ্যুত্থানকারী সেনারা ক্ষমতা দখলের পরপরই চলমান প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত করে এবং দেশের সব সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। বুধবার বিকেলে ফরাসি গণমাধ্যমে দেওয়া এক ফোন সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট এমবালো জানান, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই। সরকারি সূত্র পরে আরও জানায়, সেনারা প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তার প্রতিদ্বন্দ্বী ফার্নান্দো দিয়াস, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডোমিঙ্গোস পেরেইরা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বটশে কান্ডেকেও আটক করেছে। একই সঙ্গে সেনাপ্রধান জেনারেল বিআগে না এনটান এবং তার ডেপুটি জেনারেল মামাদু টুরেকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হাজির হয়ে অভ্যুত্থানকারী সামরিক কর্মকর্তারা জানান, গত রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফল প্রকাশের কথা থাকলেও তারা পুরো প্রক্রিয়াই স্থগিত করেছেন। তাদের দাবি, অজ্ঞাত কয়েকজন রাজনীতিক ও এক প্রভাবশালী মাদক চোরাকারবারির সহায়তায় দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার ষড়যন্ত্র চলছিল। এসব পরিস্থিতি ঠেকাতেই তারা হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সামরিক ইউনিটের প্রধান জেনারেল ডেনিস এন’কানহা টেলিভিশনে এক ঘোষণায় বলেন, সেনারা “শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় উচ্চ সামরিক কমান্ড” গঠন করেছে এবং জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে।
অভ্যুত্থানের পর রাজধানী বিসাউয়ে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। শহরের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ, গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং সরকারি ভবনের আশেপাশে সেনারা চেকপোস্ট স্থাপন করেছে। সন্ধ্যা নামার আগেই রাজধানী কার্যত ফাঁকা হয়ে যায়। সীমান্ত বন্ধ থাকায় দেশটির বাইরে যাতায়াত সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গিনি-বিসাউ স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৭৪ সালে, পর্তুগালের কাছ থেকে। এরপর থেকেই দেশটি রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সামরিক হস্তক্ষেপ এবং কোকেন পাচারের আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশটিতে অভ্যুত্থান বা অভ্যুত্থানচেষ্টা হয়েছে অন্তত নয় বার। দীর্ঘদিন ধরে দেশটি ‘নারকো-স্টেট’ হিসেবে পরিচিত, কারণ দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ইউরোপে কোকেন পাচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয় গিনি-বিসাউ। চলমান রাজনৈতিক সংকটও এর অংশ বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
অভ্যুত্থানের কয়েক ঘণ্টা আগে বৃহস্পতিবার নির্বাচনের ফল প্রকাশের কথা ছিল। প্রেসিডেন্ট এমবালো এবং তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ফার্নান্দো দিয়াস— উভয়েই নিজেদের বিজয় দাবি করেছিলেন। এতে দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। নির্বাচন কমিশন ফল প্রকাশে দেরির কারণ জানায়নি।
এই ঘটনার পর দেশটির সাবেক উপনিবেশিক শাসক পর্তুগাল দ্রুত সাংবিধানিক শাসন ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে এবং সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে দূরে থাকার অনুরোধ করেছে। আন্তর্জাতিক মহলেও পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গিনি-বিসাউ বিশ্বের দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি; দেশটির জনসংখ্যা ২০ লাখের বেশি।
সূত্র: বিবিসি