আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর বিমান হামলায় ৯ শিশু ও এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে আবারও উত্তেজনা চরমে উঠেছে। মঙ্গলবারের হামলার পর আফগানিস্তান জানিয়েছে, সঠিক সময়ে পাকিস্তানকে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে। তবে পাকিস্তান এখনো এ হামলা সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানে ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলার পর ইসলামাবাদ অভিযোগ করে আসছে— হামলাকারীরা আফগানিস্তান থেকে এসে পাকিস্তানের ভেতরে হামলা চালাচ্ছে। এই উত্তেজনার মধ্যেই আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী।
এর আগে গত মাসে দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছিল। ২০২১ সালে আফগান তালেবান কাবুলের ক্ষমতায় ফেরার পর সেটিই ছিল সবচেয়ে বড় সংঘর্ষ। ইসলামাবাদ দাবি করছে, পাকিস্তানি জঙ্গিরা আফগানিস্তানে নিরাপদ আশ্রয় পাচ্ছে এবং সেখান থেকেই হামলার পরিকল্পনা করছে। চলতি মাসে ইসলামাবাদে আত্মঘাতী হামলায় ১২ জন নিহত হন। এটি এক দশকে পাকিস্তানের রাজধানীতে প্রথম বড় হামলা। এর একদিন আগে দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে একটি সামরিক স্কুলে বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি নিয়ে হামলা চালানো হয়। পেশোয়ারে আধাসামরিক বাহিনীর সদরদপ্তরেও আত্মঘাতীদের হামলায় কয়েকজন নিহত হন।
অন্যদিকে আফগান তালেবান প্রশাসন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, তারা তাদের ভূখণ্ড অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহারের অনুমতি দেয় না। ২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তানে জঙ্গি হামলা বেড়ে যাওয়ায় ইসলামাবাদ নিজস্ব নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গত অক্টোবরে পাকিস্তান কাবুলে বিমান হামলা চালায়, যা তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর এক শীর্ষ নেতাকে লক্ষ্য করে ছিল বলে দাবি পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের। তবে তিনি নিহত হয়েছেন কি না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এই হামলার জবাবে তালেবান সীমান্তজুড়ে পাকিস্তানের সামরিক চৌকিতে হামলা চালায়। এতে পাকিস্তানের ২৩ জন সৈন্য নিহত হয় বলে দাবি ইসলামাবাদের; আর তালেবান বলেছে, পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় তাদের ৯ সদস্য নিহত হয়েছে। পরে দোহায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও টিটিপিকে নিয়ন্ত্রণে কাবুল কোনো লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
টিটিপি ২০০৭ সালে গঠিত হয় এবং আফগান তালেবানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তারা পাকিস্তানে অসংখ্য ভয়াবহ হামলার জন্য দায়ী। পাকিস্তান বহু সামরিক অভিযান চালালেও গোষ্ঠীটিকে পুরোপুরি দমন করতে পারেনি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে বেশিরভাগ হামলাই চালিয়েছে টিটিপি।
পাকিস্তান অভিযোগ করছে, টিটিপি নেতারা এখন আফগানিস্তানে অবস্থান করছে এবং সেখানে বালুচ লিবারেশন আর্মির বিদ্রোহীরাও আশ্রয় পাচ্ছে। পাশাপাশি অভিযোগ তোলা হয় যে ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে মিলিত হয়ে এ গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিচ্ছে। তবে ভারত এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
সূত্র: বিবিসি