আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
বিশ্ববাজারে টানা কয়েকদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী সোনার দাম। বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে মূল্যবান ধাতুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে এখনো সেই ধারা অব্যাহত রয়েছে। নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে শত শত বছর ধরে সোনাকে মূল্যায়ন করা হয়। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও মুদ্রাস্ফীতির চাপ থেকে রিজার্ভ সুরক্ষা দিতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছেও সোনা বড় ভরসার সম্পদ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর রিজার্ভসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট বুলিয়ানভল্টের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সবচেয়ে বেশি সোনা রয়েছে। দেশটির রিজার্ভে বর্তমানে মজুত আছে ৮ হাজার ১৩৩ দশমিক ৫ টন সোনা। এই বিশাল পরিমাণ সোনার বড় অংশ সংরক্ষিত আছে ফোর্ট নক্স ও নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ভল্টে। বর্তমান বাজারদরে এসব সোনার মূল্য ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের পর ইউরোপের বড় অর্থনীতিগুলোর কাছেই আছে সবচেয়ে বেশি সোনা। জার্মানির রিজার্ভে আছে ৩ হাজার ৩৫১ দশমিক ৬ টন, ইতালির কাছে ২ হাজার ৪৫১ দশমিক ৯ টন এবং ফ্রান্সের কাছে আছে ২ হাজার ৪৩৭ টন সোনা। এরপরই রয়েছে সুইজারল্যান্ড, যাদের রিজার্ভে আছে ১ হাজার ৩৯ দশমিক ৯ টন মূল্যবান এই ধাতু।
এসব সোনার একটি বড় অংশ ব্রেটন উডস ব্যবস্থার সময়কার, যখন ১৯৪০ থেকে ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত বৈশ্বিক মুদ্রা ব্যবস্থার ভিত্তি ছিল সোনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সে সময় সোনা ছিল আন্তর্জাতিক লেনদেনের কেন্দ্রবিন্দু।
এশিয়ার মধ্যে সোনার রিজার্ভে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে চীন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটি তাদের রিজার্ভে সোনা যুক্ত করার ক্ষেত্রে আগ্রাসী নীতি গ্রহণ করেছে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চীন রিজার্ভে যুক্ত করেছে আরও ৩৩১ টন সোনা। বর্তমানে দেশটির মোট সোনা রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৭৯ দশমিক ৬ টনে। বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেদের প্রভাব বাড়ানো ও মার্কিন ডলারের ওপর নির্ভরতা কমানোর কৌশলের অংশ হিসেবেই এই সোনা মজুদ বৃদ্ধির উদ্যোগ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এশিয়ার আরেক বড় অর্থনীতি ভারতও সোনা রিজার্ভে শীর্ষ ১০–এর মধ্যে রয়েছে। দেশটির রিজার্ভে আছে ৮৭৬ দশমিক ২ টন সোনা। জাপানের কাছে রয়েছে ৮৪৬ টন এবং তুরস্কের কাছে রয়েছে ৫৯৫ দশমিক ৪ টন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবের কাছে মজুত আছে ৩২৩ দশমিক ১ টন সোনা।
অন্যদিকে, দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশের রিজার্ভে থাকা সোনার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। জুলাই ২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে আছে মাত্র ২ দশমিক ৬১১ টন সোনা। বিশেষজ্ঞদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি, ডলারের ওপর নির্ভরতা ও দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক কৌশলের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রিজার্ভে সোনার পরিমাণ বাড়াতে পারে।
বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক উত্তেজনা, মুদ্রাস্ফীতির চাপ এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়ায় ভবিষ্যতেও সোনার চাহিদা বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। নিরাপদ বিনিয়োগ ও রিজার্ভ সুরক্ষায় সোনা দীর্ঘদিনই বড় ভূমিকা রেখে আসছে এবং ভবিষ্যতেও এই গুরুত্ব আরও বাড়বে।
সূত্র: মিন্ট