এশিয়ান পোস্ট ডেস্কঃ
চীনা প্রযুক্তি জায়ান্ট আলিবাবা চীনা সেনাবাহিনীর কাছে মার্কিন গ্রাহকসংক্রান্ত তথ্য সরবরাহের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, সাম্প্রতিক যেসব প্রতিবেদনে তাদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে লক্ষ্য করে চীনা সামরিক বাহিনীকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ার দাবি করা হয়েছে—তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আলিবাবার একজন মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, এসব অভিযোগ ও ইঙ্গিত “সম্পূর্ণ মিথ্যা” এবং বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, হোয়াইট হাউজের একটি মেমোর সূত্র ধরে তারা জানতে পেরেছে—আলিবাবা চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মিকে (পিএলএ) গ্রাহকদের আইপি অ্যাড্রেস, ওয়াইফাই তথ্য ও পেমেন্ট রেকর্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ ডেটা সরবরাহ করে। যদিও প্রতিবেদনে নিজস্বভাবে এসব দাবি যাচাই করতে পারেনি বলে উল্লেখ করে, তবে হোয়াইট হাউজ এই তথ্যকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করছে বলে দাবি করে পত্রিকাটি।
তবে আলিবাবা এসব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, এই মেমো সম্ভবত একটি ‘বিদ্বেষপূর্ণ জনসংযোগ কার্যক্রমের’ অংশ, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীনের সঙ্গে সাম্প্রতিক বাণিজ্য চুক্তিকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। হ্যাংঝৌ-ভিত্তিক এই টেক কোম্পানি বলছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এমন প্রচারণা তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক উত্তেজনা বহুদিন ধরেই চলমান। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টর এবং ডেটা নিরাপত্তার মতো খাতে দুই পরাশক্তির প্রতিযোগিতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। কয়েক মাস ধরে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের পর দুই দেশ সাময়িকভাবে এক বছরের জন্য বিরতিতে সম্মত হলেও, উত্তেজনা এখনও অব্যাহত।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউও হোয়াইট হাউজের মেমোর দাবিকে সরাসরি অস্বীকার করেছেন। তিনি ‘এক্স’-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “চীনা সরকার কখনোই কোনো কোম্পানি বা ব্যক্তিকে বিদেশি দেশের তথ্য সংগ্রহ বা সরবরাহের মতো কোনো কর্মকাণ্ডে জড়াতে নির্দেশ দেয় না। আমরা সবসময়ই স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”
নতুন এ বিতর্ক যুক্তরাষ্ট্রে চীনের সম্ভাব্য গুপ্তচরবৃত্তি নিয়ে আগের থাকা উদ্বেগকে আরও উসকে দিয়েছে। বিশেষ করে প্রযুক্তি খাতে ডেটা সংগ্রহ, নজরদারি এবং সাইবার আক্রমণের মতো বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরে বেইজিংকে সন্দেহ করে আসছে।
এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান অ্যানথ্রোপিক দাবি করেছে যে তারা প্রথমবারের মতো কোনো এআই দ্বারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত সাইবার-গুপ্তচরবৃত্তি অভিযান শনাক্ত ও প্রতিরোধ করেছে। সংস্থাটির অভিযোগ, চীনা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত জিটিজি-১০০২ নামের একটি গ্রুপ এ ধরনের সাইবার হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে জানতে চাইলে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান জানান, তিনি এ অভিযোগ সম্পর্কে অবগত নন। পাশাপাশি তিনি বলেন, বেইজিং সবসময় সাইবার হামলার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে।
শেষ পর্যন্ত আলিবাবা ও বেইজিং উভয় পক্ষই একযোগে দাবি করছে—মার্কিন মেমোর অভিযোগ কেবল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বাস্তব প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা শঙ্কা ও চীনের প্রযুক্তিগত প্রভাব বিস্তারের বিতর্ক যে আবারও তীব্র আকার নিয়েছে—তা এই ঘটনা স্পষ্ট করেছে।
আকাশজমিন / আরআর