এশিয়ান পোস্ট ডেস্কঃ
দিল্লিতে ভয়াবহ গাড়িবোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চার চিকিৎসকের নিবন্ধন বাতিল করেছে ভারতের মেডিকেল শিক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন (এনএমসি)। যাদের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন—মুজাফফর আহমেদ, আদিল আহমেদ রাথের, মুজাম্মিল শাকিল ও শাহীন সাঈদ। এনএমসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে তারা ভারতের কোথাও চাকরি করতে পারবেন না এবং স্বাধীনভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার অনুমতিও আর থাকবে না।
এনএমসি এক বিবৃতিতে জানায়, গাড়িবোমা বিস্ফোরণে জড়িত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ও প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করে এই কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি জম্মু-কাশ্মির পুলিশ, জম্মু-কাশ্মীর মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং উত্তরপ্রদেশ মেডিক্যাল কাউন্সিলের পাঠানো তথ্য-প্রমাণ যাচাই করেছে। বিবৃতিতে এনএমসি আরও বলে, চিকিৎসকের পেশায় সততা, নৈতিকতা এবং জনআস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই চার জন চিকিৎসকের আচরণ এসব নৈতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
নিবন্ধনবাতিল হওয়া চিকিৎসকদের মধ্যে মুজাফফর আহমেদ, আদিল আহমেদ রাথের এবং মুজাম্মিল শাকিল কাশ্মিরের বাসিন্দা; আর শাহীন সাঈদের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্ণৌতে। বিস্ফোরণের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়ার পরই ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশন কঠোর অবস্থানে যায়।
গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির পর্যটন এলাকা লাল কিল্লার একটি মেট্রো স্টেশনের কাছে আত্মঘাতী ধরনের গাড়িবোমা বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই নিহত হন গাড়ির চালকসহ ১৩ জন। গুরুতর আহত হন কমপক্ষে ৩০ জন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত গাড়িটি চালাচ্ছিলেন উমর নবী। জম্মু-কাশ্মিরের পুলওয়ামা জেলার এই চিকিৎসকই হামলার প্রধান সন্দেহভাজন ছিলেন এবং বিস্ফোরণের সময়ই তার মৃত্যু হয়।
বিস্ফোরণের প্রায় দুই সপ্তাহ আগে জম্মু-কাশ্মিরের অনন্তনাগ জেলায় জইশ-ই মহম্মদের পোস্টার সাঁটতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন আদিল আহমেদ রাথের। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হরিয়ানার ফরিদাবাদ জেলা থেকে মুজাফফর আহমেদ ও মুজাম্মিল শাকিলকে এবং উত্তরপ্রদেশের শাহারানপুর জেলা থেকে শাহীন সাঈদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এই তিনজনকে আটক করার দুদিন পরই ঘটে দিল্লির ভয়াবহ বিস্ফোরণ।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ফরিদাবাদ ও শাহারানপুরে অভিযান চালিয়ে মোট ২ হাজার ৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার হওয়ার মাত্র দুদিন পরেই দিল্লিতে গাড়িবোমা হামলা ঘটে। তদন্তকারীরা ধারণা করছেন—এই বিস্ফোরকগুলোর একটি অংশই হয়তো লাল কিল্লা সংলগ্ন এলাকায় ব্যবহৃত হয়েছে।
তদন্তে উঠে এসেছে যে, উমর নবীসহ অভিযুক্ত চিকিৎসকেরা সন্ত্রাসী সংগঠনের হয়ে নেপথ্যে সমন্বয় করতেন। চিকিৎসকের মতো সম্মানজনক পেশায় থেকে এ ধরনের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছে এনএমসি। সংস্থাটি মনে করে, চিকিৎসকের পরিচয়ে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ককে সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা জনআস্থার গুরুতর লঙ্ঘন।
এই ঘটনার পর ভারতজুড়ে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা যাচাই ও ব্যাকগ্রাউন্ড স্ক্রিনিং আরও জোরদার করার দাবি উঠেছে। পাশাপাশি তদন্ত সংস্থা বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত আরও সহযোগী ছিল কি না তা যাচাই করছে।
আকাশজমিন / আরআর