এশিয়ান পোস্ট ডেস্কঃ
আফ্রিকায় নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে মারবুর্গ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব। ইথিওপিয়া প্রথমবারের মতো এই প্রাণঘাতী ও অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাস রোগের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মোট ৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আক্রান্তদের সঙ্গে যাদের যোগাযোগ ছিল—তাদের শনাক্তের কাজও জোরদার করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেসাস বলেন, প্রাদুর্ভাবের খবর পাওয়ার পর ইথিওপিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো খুব দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, এই দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায় যে দেশটি খুব গুরুত্বসহকারে কাজ করছে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে আনতে চায়। টেড্রোস জানান, ডব্লিউএইচও ইথিওপিয়াকে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করছে এবং সীমান্ত এলাকাগুলোতে ঝুঁকি কমাতে যৌথভাবে কাজ চলছে।
এর আগে ডব্লিউএইচও জানায়, ইথিওপিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ভাইরাল হেমোরেজিক জ্বরের সন্দেহে বেশ কয়েকটি নমুনা পরীক্ষা করছিলেন। পরে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এটি মারবুর্গ ভাইরাস। এই ভাইরাস ইবোলা পরিবারের ফিলোভিরিডি গ্রুপের সদস্য এবং বিশেষজ্ঞদের মতে এটি ইবোলার চেয়েও বেশি প্রাণঘাতী হতে পারে।
মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা সিডিসি জানিয়েছে, মারবুর্গ একটি ‘দুর্লভ কিন্তু মারাত্মক’ ধরনের হেমোরেজিক জ্বর। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের তরল বা তার দ্বারা দূষিত জিনিসের সংস্পর্শে এলেই এটি ছড়াতে পারে। ভাইরাসটির উৎস মিশরের ফলখেকো বাদুড়, যেখান থেকে মানুষের দেহে এটি সংক্রমিত হয়।
রোগের প্রাথমিক উপসর্গের মধ্যে তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা এবং শরীরব্যথার পাশাপাশি দেখা যায় চামড়ায় র্যাশ। পরবর্তীতে রোগীর শরীরে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে, যা অনেক সময় প্রাণঘাতী পরিস্থিতি তৈরি করে। সিডিসি জানায়, মারবুর্গের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা অনুমোদিত টিকা নেই। রোগীকে বিশ্রাম, তরল ঘাটতি পূরণ এবং সহায়ক পরিচর্যার ওপর চিকিৎসা নির্ভর করে।
ইথিওপিয়ার ওমো অঞ্চলে এই প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় দক্ষিণ সুদানের জন্যও ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আফ্রিকা সিডিসি’র মহাপরিচালক জ্যাঁ কাসেয়া বলেন, “দক্ষিণ সুদান খুব দূরে নয় এবং তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দুর্বল। তাই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।” তিনি জানান, সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
ইথিওপিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আক্রান্তদের চিকিৎসা নেয়ার পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে সতর্ক করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং ব্যাপক স্ক্রিনিং চলছে। মন্ত্রণালয় জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, মারবুর্গের উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আফ্রিকার অন্য কোনো দেশে মারবুর্গ সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। ডব্লিউএইচও পরিস্থিতি নজরে রেখেছে এবং প্রয়োজনে জরুরি সহায়তা বাড়ানোর প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে।
এশিয়ান পোস্ট / এফআরজে