অনলাইন ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কের প্রভাবে ভয়াবহ সংকটে পড়েছে ভারতের চিংড়ি রপ্তানি শিল্প। প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় চিংড়ির দাম বেশি হওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন দেশটির চাষিরা।
পশ্চিমবঙ্গের নন্দিগ্রামের চাষি বুদ্ধদেব প্রধান বলেন, “চিংড়ির দরপতন আমাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। চেষ্টা করছি যে ৩ লাখ রুপি বিনিয়োগ করেছি, সেটি অন্তত তুলে আনতে পারি কি না।” প্রথম দফায় ক্ষতির পরও দ্বিতীয়বার চাষ শুরু করেছেন তিনি— ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায়।
ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিংড়ি উৎপাদনকারী দেশ; তাদের আগে রয়েছে কেবল ইকুয়েডর। গত অর্থবছরের শেষে ভারত প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করেছে, যার ৪৮ শতাংশ গেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
সর্বশেষ তথ্যমতে, দেশটি ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন টন চিংড়ি রপ্তানি করেছিল, যার বেশিরভাগই ছিল ‘ভান্নামি’ বা সাদাপায়ের চিংড়ি। এটি বছরে দু’বার উৎপাদন করা যায়— ফেব্রুয়ারি থেকে জুন ও জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। তবে রোগবালাইয়ের আশঙ্কায় দ্বিতীয় মৌসুমে অনেক চাষি চিংড়ি উৎপাদন বন্ধ রাখেন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, গুজরাট, ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, গোয়া, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও কেরালায় এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ১ কোটি মানুষ।
গত মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় চিংড়ির ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। এরপর দেশটিতে প্রতি কেজি চিংড়ির দাম ৩০০ রুপি থেকে নেমে আসে ২৩০ রুপিতে। অথচ উৎপাদন খরচই ২৭৫ রুপি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের হার দাঁড়িয়েছে ৫৮ শতাংশ, যা ভারতের জন্য রপ্তানির বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে অনেক চাষি নতুন করে বীজ কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে বহু হ্যাচারি বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সর্বভারতীয় চিংড়ি হ্যাচারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কুমার ইয়েল্লানেকি। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হ্যাচারির ওপর বড় প্রভাব ফেলছে। ফলে অনেক হ্যাচারি উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।”
হ্যাচারিগুলো বছরে প্রায় ৮ হাজার কোটি বীজ পোনা উৎপাদন করত। কিন্তু চাহিদা না থাকায় গত কয়েক মাসে প্রায় ৮০০ কোটি বীজ ফেলে দিতে হয়েছে। চিংড়ির একেকটি বীজ মাত্র তিন থেকে চার দিন বাঁচে।
কুমার ইয়েল্লানেকি সতর্ক করে বলেন, যদি এই পরিস্থিতি না বদলায়, তবে হাজারো হ্যাচারি মালিক ও চাষি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান চিংড়ি সরবরাহকারী দেশ ইকুয়েডর। মার্কিন ক্রেতাদের কাছে দেশটির চিংড়ি সহজলভ্য ও তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী হওয়ায় ভারতের বাজার শেয়ার দ্রুত কমছে।