আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ইউরোপে ২০২৪ সালে তীব্র গরমে ৬২ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এই মহাদেশে গত বছর তীব্র গরমে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে বয়স্ক এবং নারীর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। সোমবার বিজ্ঞানবিষয়ক জনপ্রিয় সাময়িকী নেচারে প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।
বার্সেলোনা-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ (আইএসগ্লোবাল) এই গবেষণা পরিচালনা করেছে। তারা ইউরোপের ৩২টি দেশের দৈনিক মৃত্যুর রেকর্ড সংগ্রহ করে পরিসংখ্যান তৈরি করেছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গ্রীষ্ম মৌসুমে তীব্র গরমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত হয়েছে মোট ১ লাখ ৮১ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
২০২৪ সালের ১ জুন থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৃত্যুর হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এই সময়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৬৭ হাজার ৯০০-র চেয়ে কিছুটা কম। আইএসগ্লোবাল ২০২২ সাল থেকে ইউরোপে তীব্র গরমে মানুষের প্রাণহানির তথ্য রেকর্ড করা শুরু করে।
গবেষণার প্রধান লেখক টমাস জানোস বলেন, এই পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের জনগণকে বৈরী আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য এখনই প্রস্তুত করার কাজ শুরু করতে হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) জলবায়ু পর্যবেক্ষণবিষয়ক সংস্থা কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস বলছে, ২০২৪ সালের গ্রীষ্ম মৌসুম ছিল ইউরোপের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণতম।
গবেষণায় দেখা গেছে, তীব্র গরমে যারা মারা গেছেন, তাদের দুই-তৃতীয়াংশই ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলের। এর মধ্যে ইতালিতে প্রতি বছর সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। দেশটিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা ইউরোপের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং গত তিনটি গ্রীষ্মকালই সেখানে তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেশি ছিল।
তবে ২০২৫ সালের গ্রীষ্ম মৌসুমকে এই গবেষণার অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ইতালিয়ান সোসাইটি ফর এমার্জেন্সি মেডিসিন (এসআইএমইইউ) বলেছে, চলতি বছর তীব্র গরমের সময় দেশটির কিছু অঞ্চলের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীর সংখ্যা ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসআইএমইইউর প্রেসিডেন্ট আলেসান্দ্রো রিকার্ডি বলেন, যেসব রোগী আগে থেকেই দুর্বল ছিলেন এবং একাধিক রোগে ভুগছিলেন, তারা আরও বেশি হাসপাতাল সেবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। এর ফলে হাসপাতালগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হয়েছে, যেমনটা আমরা ফ্লু মৌসুমের সময় দেখে থাকি।
বর্তমানে তাপমাত্রা তাপদাহ স্তরে পৌঁছালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ নিয়মিতভাবে তাপ সতর্কতা জারি করে। গবেষক জানোস বলেছেন, নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলে ও বিশেষ জনগোষ্ঠীর জন্য ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মতো তুলনামূলক কম গরমেও প্রাণহানি ঘটতে পারে। সূত্র: রয়টার্স।
এশিয়ানপোস্ট / আরজে