আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় শহর গাজা সিটির একটি বহুতল ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েল। এই হামলায় একদিনেই অন্তত ৬৫ জন নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, চলমান হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০টি ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে হাজারো পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, গাজা সিটিতে ধ্বংসযজ্ঞ আরও তীব্রতর করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। শহরের বিভিন্ন অংশে লাগাতার হামলার অংশ হিসেবে তারা একটি পাঁচতলা ভবন—আল-রুয়া টাওয়ার—পুরোপুরি ধ্বংস করে। ওই ভবনটিতে ২৪টি অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান, একটি ক্লিনিক ও একটি জিম ছিল।
রোববারের হামলায় নিহত ৬৫ জনের মধ্যে ৪৯ জনই ছিলেন গাজার উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য আগে থেকে সতর্ক করেছিল। কিন্তু হামলার সময় আশেপাশে অস্থায়ী তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোও পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের প্রধান আমজাদ শাওয়া, যিনি হামলার সময় ঘটনাস্থলের কাছে ছিলেন, আল জাজিরাকে বলেন, “অবস্থা ভয়াবহ, চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শত শত পরিবার আশ্রয় হারিয়েছে। ইসরায়েল এভাবে মানুষকে দক্ষিণে সরিয়ে নিতে চাইছে, অথচ সবাই জানে দক্ষিণেও কোনো নিরাপদ স্থান নেই।”
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সেনারা ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো ও সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি’ লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। তবে ধ্বংস হওয়া অনেক ভবন ছিল আবাসিক, যেখানে সাধারণ মানুষ বসবাস করতেন। এর আগে আল জাজিরা ক্লাব এলাকা এবং আশপাশে তাঁবুতে থাকা পরিবারগুলোর উপরও হামলা চালানো হয়।
গত শুক্রবার ও শনিবার গাজায় আরও দুটি বহুতল ভবন—১৫ তলা সউসি টাওয়ার এবং ১২ তলা মুশতাহা টাওয়ার—ধ্বংস করে ইসরায়েল। এসব হামলায় বহু মানুষ আহত হন এবং অনেকেই সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। সউসি টাওয়ারে বসবাসকারী এক পরিবার জানায়, “আমাদের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। আমরা কিছুই নিতে পারিনি। মাত্র আধা ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল।”
ইতোমধ্যেই প্রায় ১ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। গত আগস্টে ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করে, যার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এ হামলা চলছে। ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ইসরায়েল যে এলাকাকেই নিরাপদ ঘোষণা করুক না কেন, বাস্তবে গাজার কোথাও নিরাপদ জায়গা নেই।
রোববার গাজার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, গাজা সিটির বাসিন্দারা যেন ইসরায়েলের ঘোষিত ‘মানবিক নিরাপদ অঞ্চল’ সম্পর্কে বিভ্রান্ত না হয়। দক্ষিণের খান ইউনিসের আল-মাওয়াসিকে মানবিক এলাকা ঘোষণা করা হলেও সেখানে একাধিকবার হামলা চালানো হয়েছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানিয়েছেন, “প্রতি পাঁচ থেকে দশ মিনিটে গাজা সিটির চারপাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।” তিনি জানান, সাবরা, জেইতুনসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র বোমাবর্ষণ চলছে এবং ইসরায়েল দূরনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরক রোবট ব্যবহার করে আবাসিক এলাকাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে।
শেখ রাদওয়ান এলাকায় ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদ এবং সরকারি স্থাপনাও হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। গাজার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত আল-ফারাবি স্কুল, যেটিকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল, সেখানে হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।