সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ১১:৫৭ অপরাহ্ন
নোটিশ :
Eid Bazar ! Eid Bazar ! Held on 30th March Saturday @ Paterson Firemanhall, Adress 226 Walnut ST, Paterson, NJ 07522 /  9th International Women's Day Award Held on April 27, 2024 @ The Brownston, 251 West Broadway, Paterson, NJ .7522 Ticket 70 Dollar Per Person Get Tickets From www.eventbrite.com

রোহিঙ্গা সংকটঃ টেকসই সমাধানে প্রধান উপদেষ্টার ৭ দফা প্রস্তাব

রাজু / ৩০ বার
আপডেটের সময় : সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ১১:৫৭ অপরাহ্ন

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে একটি বাস্তবভিত্তিক রোডম্যাপ প্রণয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গারা যাতে সম্মান, মর্যাদা এবং নিরাপত্তার সঙ্গে তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে, সেজন্য এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু কথার মাধ্যমে নয়, বরং পরিকল্পিত ও যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে এই সংকটের স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।”

 

সোমবার (২৫ আগস্ট) সকালে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত ‘রোহিঙ্গা বিষয়ক অংশীজন সংলাপ’-এর দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এই সংলাপ যৌথভাবে আয়োজন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভের দপ্তর।

 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “২০১৭ সালের এই দিনে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। এটি ইতিহাসের এক করুণ অধ্যায়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আজও আমরা নতুন রোহিঙ্গাদের প্রবেশ করতে দেখছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এই সংকট আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে।”

 

তিনি আরও বলেন, “এটা সাংঘাতিক রকমের ভুল হবে যদি আমরা চুপ করে বসে থাকি এবং রাখাইন রাজ্যে জাতিগত নিধনের শেষ চিহ্ন দেখার জন্য অপেক্ষা করি। আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির আলোকে আমাদের অবশ্যই এখন কাজ শুরু করতে হবে।”

 

ড. ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবের মার্চ মাসে কক্সবাজার সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, “মহাসচিব তাঁর সফরের সময় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করে তাদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। এই বার্তা শুধু একটি প্রতীকী পদক্ষেপ নয়, বরং রোহিঙ্গাদের আত্মবিশ্বাস এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতীক।”

 

তিনি বলেন, “২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দিয়েছে এবং আজ প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। প্রতি বছর ২২ হাজারের মতো রোহিঙ্গা শিশু কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে জন্ম নিচ্ছে। অন্যদিকে, বর্তমানে মিয়ানমারে রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ৫ লাখের নিচে। এই চিত্র প্রমাণ করে, সেখানে এখনও নির্যাতন চলছে এবং মানুষ বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়ছে।”

 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “কক্সবাজারের জনগণ এই দীর্ঘ সময় ধরে যে ত্যাগ স্বীকার করছে, তা অনস্বীকার্য। এই সংকট বাংলাদেশের অর্থনীতি, সম্পদ, পরিবেশ, সমাজ এবং সুশাসনের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এত কিছু সত্ত্বেও, বাংলাদেশ তার মানবিক দায়িত্ব পালন করে চলেছে। কিন্তু আমাদের অভ্যন্তরীণ সম্পদের সীমা রয়েছে। তাই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত ও কার্যকর ভূমিকা এখন অত্যন্ত জরুরি।”

 

প্রধান উপদেষ্টার প্রস্তাবিত সাত দফা কর্মপরিকল্পনা:

 

১. স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত:

রোহিঙ্গাদের দ্রুত এবং সম্মানজনক প্রত্যাবাসনে একটি বাস্তবভিত্তিক রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে হবে। সময়ক্ষেপণ না করে এখনই এই রোডম্যাপ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা দরকার।

 

২. মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখা:

জীবনরক্ষাকারী সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থা ও অংশীজনদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

 

৩. নিপীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করা:

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মিকে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও জীবিকার নিশ্চয়তা দিতে হবে। নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে যেন প্রবেশ না করে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদেরও তাদের নিজ ঘরে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

 

৪. গঠনমূলক সংলাপের প্ল্যাটফর্ম গঠন:

মিয়ানমারের ভেতরে সহিংসতা বন্ধে, জাতিগত নিপীড়ন রোধে এবং সুরক্ষিত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়, রাখাইন কর্তৃপক্ষ ও মিয়ানমার সরকারের মধ্যে একটি গঠনমূলক সংলাপের প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে হবে।

 

৫. আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার:

বিশেষ করে আসিয়ানকে রাখাইন রাজ্যে নিরাপদ ও সহনশীল পরিবেশ তৈরিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও সক্রিয় ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে।

 

৬. জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে অবস্থান:

আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক অংশীজনদের জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়াই এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

 

৭. ন্যায়বিচার ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত:

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনা। এখনই সময় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার।

 

আন্তর্জাতিক সম্মেলনে সুপারিশ উপস্থাপনের আশাবাদ

 

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “কক্সবাজারের এই সংলাপ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশসমূহ জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। আমরা আশাবাদী, এই সম্মেলন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও অঙ্গীকার গড়তে ভূমিকা রাখবে।”

 

উপস্থিত ছিলেন যাঁরা

 

সংলাপের অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও শিক্ষাবিদদের প্রতিনিধিরা, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা।

 

সংলাপ ও ক্যাম্প পরিদর্শন

 

প্রধান উপদেষ্টা সকাল ১০টায় কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করেন এবং পরে সড়কপথে ইনানীর হোটেল বে-ওয়াচে সম্মেলনস্থলে পৌঁছান।

রবিবার (২৪ আগস্ট) বিকেলে শুরু হওয়া এই তিনদিনব্যাপী সংলাপে দেশি-বিদেশি নানা পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। সম্মেলনের শেষ দিন ২৬ আগস্ট অংশগ্রহণকারীরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন বলে জানা গেছে।

এশিয়ানপোস্ট/আরজে

 


এ জাতীয় আরো সংবাদ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর