আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে গত চার দিন ধরে ব্যাপক উত্তেজনা চলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নথিবিহীন অভিবাসীদের মধ্যে। লস অ্যাঞ্জেলেসের নথিবিহীন অভিবাসীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বলে পরিচিত ডালাস শহরেও।
আজ মঙ্গলবার ডালাসের শহরতলী এলাকা মার্গারেট হান্ট হিল ব্রিজে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। এই এলাকাটি মেক্সিকো থেকে আসা লোকজন অধ্যুষিত এবং এদের বেশিরভাগেরই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার জন্য প্রয়োজনীয় নথিপত্র নেই।
নথিবিহীন অভিবাসীদের আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা এল মুভিমিয়েন্তো’র ডাকে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকে একজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতেই মেক্সিকো এবং আমেরকার পতাকা। ডালাসে এখনও পুলিশ ও বিক্ষোভাকারীর মধ্যে সংঘাত শুরু হয়নি, তবে যেসব ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে— সেসব দেখে অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে যেকোনো সময় সংঘাত শুরু হতে পারে।
এল মুভিমিয়েন্তোর একজন সংগঠক আজায়েল আলভারেজ। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে তিনি বলেন, “গত কয়েক দিনে লস অ্যাঞ্জেলেসে অনেক কিছু ঘটেছে। আপনারা দেখেছেন যে সেখানে প্রথমে পুলিশ, তারপর ন্যাশনাল গার্ড এবং শেষে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে বিক্ষোভ দমনের জন্য।”
“আমরা মনে করি, যারা এখনও প্রতিবাদ করতে ভয় পাচ্ছে— তাদের ভয় কাটানোর এখনই সময়। এ কারণেই আমরা লস অ্যাঞ্জেলেসের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছি।”
গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসন উচ্ছেদ এবং নথিবিহীন অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছিলেন ট্রাম্প। তার পর থেকে নথিবিহীন অভিবাসীদের শনাক্ত ও আটক করতে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে অভিযান শুরু করে পুলিশ এবং মার্কিন কাস্টমস বিভাগের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা আইসিই।
তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্যের দ্বিতীয় প্রধান শহর লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিযানে নামে পুলিশ এবং আইসিই। প্রসঙ্গত, প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার নথিবিহীন অভিবাসী আছেন। এদের অধিকাংশই মেক্সিকো এবং দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা। সাধারণত শহরতলী এলাকাগুলোতে তারা থাকেন।
গত ৬ জুন শুক্রবার লস অ্যাঞ্জেলেসের শহরতলী এলাকা প্যারামাউন্টে নথিবিহীন অভিবাসীদের শনাক্ত ও আটক করতে অভিযানে নামেন পুলিশ ও আইসিই সদস্যরা। তবে অভিযানের শুরুতেই তারা ব্যাপক প্রতিরোধের সম্মুখীন হন। প্যারামাউন্টের বাসিন্দারা তীব্র বিক্ষোভের পাশাপাশি পুলিশ ও আইসিই সদস্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল, বোতল ও মলোটভ ককটেল বা পেট্রোল বোমা ছুড়তে থাকেন।
অবস্থা বেগতিক দেখে পরের দিন পুলিশ ও আইসিই সদস্যদের সহায়তার জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন আধা সামরিক বাহিনী হাজার ন্যাশনাল গার্ডের ২ হাজার সদস্যকে মোতায়েনের নির্দেশ দেন ট্রাম্প। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার পরিবর্তে সংঘাত আরও বাড়তে থাকে।
এই অবস্থায় গতকাল সোমবার লস অ্যাঞ্জেলেসে আরও ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড এবং তাদের সঙ্গে ৭০০ মেরিন সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাম্প। আজ চার দিন ধরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে আছে লস অ্যাঞ্জেলেস। মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, সোমবার নিউইয়র্ক সিটি, ফিলাডেলফিয়া এবং সান ফ্রান্সিসকোতেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। সূত্র : সিএনএন
এশিয়ান পোস্ট/আরজে